আগস্ট ১, ২০২৫, ০৩:৩৬ পিএম
বাংলাদেশে পাটের আবাদ, এর অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত গুরুত্ব নিয়ে একটি বিস্তারিত সংবাদ প্রতিবেদন এখানে তুলে ধরা হলো। পাট বাংলাদেশের একটি প্রধান অর্থকরী ফসল এবং দেশের অর্থনীতিতে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
পাটের আবাদ ও উৎপাদন পাটচাষিরা মার্চ ও এপ্রিল মাসে পাটের বীজ বপন শুরু করেন এবং তিন থেকে চার মাস পর, সাধারণত জুলাই ও আগস্টে ফসল তোলেন। জাত এবং বপন পদ্ধতির উপর নির্ভর করে প্রতি একর জমিতে সাধারণত ২.৫ থেকে ৪.৫ কেজি পাটের বীজের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে প্রায় ৮,০০,০০০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়।
পাটের আঁশ সংগ্রহের দুটি প্রধান পদ্ধতি রয়েছে: ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি, যেখানে প্রচুর পানি থাকে এমন এলাকায় কৃষকরা পুরো গাছটি পানিতে ভিজিয়ে রাখেন; এবং ফিতাকল পদ্ধতি, যা কম বৃষ্টিপাত বা উপযুক্ত জলাশয়ের অভাবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে উৎপাদিত দুটি সবচেয়ে সাধারণ জাতের পাট হলো সাদা পাট এবং তোষা পাট।
অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ১.৬ মিলিয়ন টন পাট উৎপাদন করে। ভারত-এর পর বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাট উৎপাদনকারী দেশ, যা বৈশ্বিক উৎপাদনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।
পাট চাষের সঙ্গে সরাসরি ৪ থেকে ৪.৫ মিলিয়ন কৃষক জড়িত এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন সহ এই খাতটি প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহে সহায়তা করে। এটি দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৩-৪% এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (GDP) প্রায় ১.৫% এবং কৃষি GDP-এর ২.৬% অবদান রাখে।
পাট গাছ থেকে আঁশের পাশাপাশি পাটখড়িও পাওয়া যায়। উৎপাদিত পাটখড়ির পরিমাণ পাটের আঁশের প্রায় দ্বিগুণ। প্রতি বছর প্রায় ৩ মিলিয়ন টন পাটখড়ি উৎপাদিত হয়, যার অধিকাংশই বেড়া, ছাদ এবং পার্টিকেল বোর্ড, কাগজের মণ্ড ও অ্যাক্টিভেটেড চারকোল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, বাকিটা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
পরিবেশগত দিক থেকে পাট একটি টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব ফসল। পাটের আঁশ শতভাগ জৈব-বিয়োজ্য এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য। এক হেক্টর পাট ক্ষেত ১০০ দিনে প্রায় ১৫ টন কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং প্রায় ১১ টন অক্সিজেন নির্গত করে, যা বিশ্ব উষ্ণায়ন মোকাবিলায় সহায়তা করে।
পাটের বাজার ও বাণিজ্য ঐতিহ্যগতভাবে, ৪০ কেজির একক মণ হিসেবে পাট বিক্রি করা হয়। তবে আন্তর্জাতিক পরিমাপের একক হলো বেল, যার ওজন ১৮২ কেজি। উৎপাদিত পাটের প্রায় ৫১% স্থানীয় মিলে, ৪৪% রপ্তানি হয় এবং ৫% গৃহস্থালি ও কুটির শিল্পে ব্যবহৃত হয়। পাটের বিপণন তিনটি ধাপে হয়: ছোট স্থানীয় বাজার, বড় বাজার এবং দেশীয় মিল ও বিদেশি বাজার।