রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

আগুনে পোড়া রোগীদের যেভাবে স্কিন প্রতিস্থাপন করা হয়

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৬, ২০২৫, ১২:৩৬ পিএম

আগুনে পোড়া রোগীদের যেভাবে স্কিন প্রতিস্থাপন করা হয়

ছবি- সংগৃহীত

আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগীর চিকিৎসা একটি অত্যন্ত জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। শরীরের ব্যাপক অংশের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হলে এটি শুধু শারীরিক আঘাতই নয়, সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে জীবন বাঁচাতে এবং রোগীর সুস্থতা নিশ্চিত করতে ত্বক প্রতিস্থাপন বা 'স্কিন গ্রাফটিং' একটি অপরিহার্য চিকিৎসা পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের স্থানে নতুন সুস্থ ত্বক স্থাপন করা হয়, যা রোগীর সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করে।

আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসায় ত্বক প্রতিস্থাপন (Skin Grafting) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জীবন রক্ষাকারী প্রক্রিয়া। যখন কোনো ব্যক্তি আগুনে গুরুতরভাবে পুড়ে যান, তখন তাদের শরীরের ব্যাপক অংশের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে না এবং শরীরের তাপমাত্রা ও তরল ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটায়। এমন পরিস্থিতিতে নতুন সুস্থ ত্বক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ প্রতিস্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়ে।


 

স্কিন প্রতিস্থাপন কী? স্কিন প্রতিস্থাপন হলো ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক সরিয়ে সুস্থ ত্বক স্থাপন করা। এই সুস্থ ত্বক সাধারণত রোগীর নিজের শরীর থেকেই নেওয়া হয়, যা অটোগ্রাফট (Autograft) নামে পরিচিত। কারণ, রোগীর নিজের ত্বক ব্যবহার করলে শরীর কর্তৃক তা প্রত্যাখ্যান হওয়ার ঝুঁকি থাকে না।

প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া: স্কিন প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া সাধারণত কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়: ১. ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক অপসারণ: প্রথমে পুড়ে যাওয়া অংশের মৃত বা ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক সাবধানে সরিয়ে ফেলা হয়। এটি সংক্রমণের ঝুঁকি কমায় এবং নতুন ত্বকের জন্য একটি পরিষ্কার ভিত্তি তৈরি করে। ২. ত্বক সংগ্রহ (Harvesting): এরপর রোগীর শরীরের কোনো সুস্থ অংশ থেকে, যেমন - উরু, পিঠ, বা নিতম্ব থেকে একটি বিশেষ যন্ত্র, ডার্মাটোম (Dermatome) ব্যবহার করে পাতলা করে ত্বক সংগ্রহ করা হয়। ৩. ত্বকের প্রস্তুতি: সংগৃহীত ত্বককে কখনও কখনও ছোট ছোট টুকরা করে ছিদ্রযুক্ত করা হয় (mesh grafting), যাতে এটি বড় এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া যায় এবং এর নিচ থেকে তরল বেরিয়ে যেতে পারে। ৪. ত্বক স্থাপন: প্রস্তুতকৃত ত্বককে পুড়ে যাওয়া স্থানের ওপর স্থাপন করা হয় এবং সেলাই বা স্টেপল করে আটকে দেওয়া হয়। এরপর একটি ড্রেসিং দিয়ে ঢেকে রাখা হয়।

প্রতিস্থাপনের প্রকারভেদ: ত্বক প্রতিস্থাপনের দুটি প্রধান প্রকার রয়েছে: ১. স্প্লিট-থিকনেস গ্রাফট (Split-Thickness Graft): এই পদ্ধতিতে ত্বকের উপরের স্তর এবং মধ্যস্তরের আংশিক অংশ নেওয়া হয়। এটি সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি কারণ এটি বড় এলাকা কভার করতে পারে এবং ডোনার সাইট দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। ২. ফুল-থিকনেস গ্রাফট (Full-Thickness Graft): এই পদ্ধতিতে ত্বকের উপরের ও মধ্যস্তরের সম্পূর্ণ অংশ নেওয়া হয়। এটি সাধারণত ছোট, গভীর পোড়ার জন্য ব্যবহার করা হয়।

পুনরুদ্ধার ও জটিলতা: প্রতিস্থাপনের পর রোগীর সুস্থ হতে বেশ কিছুদিন সময় লাগে। নতুন ত্বককে শরীরের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে এবং রক্ত সরবরাহ তৈরি হতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লাগে। এই সময়ে সংক্রমণ, গ্রাফট প্রত্যাখ্যান, বা রক্ত জমাট বাঁধার মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে। সফল প্রতিস্থাপনের পর ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন অপরিহার্য।

আগুনে পোড়া রোগীদের জন্য ত্বক প্রতিস্থাপন শুধু শারীরিক নিরাময়ের জন্যই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাদের জীবন ফিরিয়ে দিতে এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসতে সাহায্য করে।