শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

জিংকের অভাবে ভুগছেন না তো

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৪, ২০২৫, ০৪:২৬ পিএম

জিংকের অভাবে ভুগছেন না তো

ছবি- সংগৃহীত

জিংক এমন একটি পুষ্টি উপাদান, যা প্রতিদিন অল্প পরিমাণে গ্রহণ করলেই আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন। এই ধরনের পুষ্টি উপাদানকে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বলা হয়। একটি সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললে সাধারণত আলাদাভাবে জিংকসমৃদ্ধ নির্দিষ্ট কোনো খাবার গ্রহণ করার প্রয়োজন পড়ে না। তবে অনেকেই এই পুষ্টি উপাদানের ঘাটতিতে ভুগতে পারেন। জিংকের অভাবে সাধারণ কিছু উপসর্গ দেখা দেয়, অনেক সময় যেসবকে কোনো পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।

জিংক আমাদের দেহের নানা ক্রিয়াবিক্রিয়ায় অংশ নেয়। জিংকের অভাব হলে এসব ক্রিয়াবিক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় এবং তারই কিছু উপসর্গ দেখা দেয় আমাদের দেহে। স্নায়ুর কার্যক্ষমতা ঠিক রাখতেও পর্যাপ্ত জিংক প্রয়োজন। টাঙ্গাইলের সরকারি কুমুদিনী কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের প্রধান শম্পা শারমিন খান এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন।

 

জিংকের অভাবে যেসব সমস্যা দেখা দেয়

জিংকের ঘাটতি হলে কিছু উপসর্গ প্রায় সবারই হতে পারে, তবে কিছু সমস্যা আবার নির্দিষ্ট বয়স বা পরিস্থিতিতেই দেখা যায়। নিচে এই সমস্যাগুলো উল্লেখ করা হলো:

  • ডায়রিয়া ও সংক্রমণ: জিংকের অভাবে প্রায়ই ডায়রিয়া হতে পারে। এই পুষ্টি উপাদানের অভাবে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে, ফলে বারবার নানা ধরনের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

  • ত্বকের সমস্যা: ত্বকে বারবার ব্রণ বা পিম্পলের মতো ক্ষত সৃষ্টি হওয়া কিংবা যেকোনো ক্ষত সহজে না শুকানোর মতো সমস্যাও দেখা যেতে পারে। কম বয়সেই ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে পারে।

  • চুলের সমস্যা: চুলের গড়ন বেশ পাতলা হয়ে যেতে পারে জিংকের অভাবে।

  • ক্ষুধামান্দ্য ও ওজন হ্রাস: ক্ষুধামান্দ্য দেখা দিতে পারে, ফলে ওজন কমে যেতে পারে।

  • স্বাদ ও ঘ্রাণে অস্বাভাবিকতা: স্বাদ ও ঘ্রাণের অনুভূতিতে অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে।

  • মানসিক ও স্নায়বিক সমস্যা: কাজে মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা বিঘ্নিত হতে পারে এবং ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।

  • শিশুদের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত: শিশুদের ক্ষেত্রে জিংকের ঘাটতি খুব বেশি হলে শারীরিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

  • প্রজনন সমস্যা: সন্তান নিতে ইচ্ছুক দম্পতির যে কারও জিংকের ঘাটতি থাকলে সন্তানধারণের চেষ্টা বিফল হতে পারে।

কারা আছেন ঝুঁকিতে?

 

অন্তঃসত্ত্বা নারী, শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি—এরা জিংকের ঘাটতি হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন। তবে যেকোনো বয়সী মানুষই জিংকের ঘাটতিতে ভুগতে পারেন। যদি কারও খাওয়াদাওয়া ঠিকঠাক না হয় কিংবা পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ সত্ত্বেও কোনো রোগের কারণে অন্ত্র থেকে পর্যাপ্ত জিংক দেহে শোষিত না হয়, তাহলে জিংকের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তবে এ ধরনের কোনো রোগ না থাকলে কেবল বয়স অনুযায়ী সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখলেই আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।

 

উপসর্গ দেখে যদি মনে হয়, আপনি জিংকের ঘাটতিতে ভুগছেন, তাহলে নিজের খাদ্যাভ্যাসের দিকে মনোযোগ দিন। যেসব খাবারে জিংক পাওয়া যায়, সেগুলো হলো:

  • মাছ, মাংস, ডিম, দুধ

  • যেকোনো ধরনের বাদাম, গোটা শস্য (যেমন, আস্ত গম)

  • ছোলাবুট, রাজমা, শিম, মটরশুঁটি, কুমড়ার বীজ

  • বিভিন্ন ধরনের ডাল, মাশরুম প্রভৃতি।

স্বাস্থ্যকর জীবনধারা শুরু করার কিছুদিন পরও সমস্যাগুলো থেকে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এসব উপসর্গের পেছনে অন্য কোনো সমস্যাও দায়ী থাকতে পারে, যা চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করবেন। তবে নিজ থেকে জিংকের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিংক গ্রহণ করলে দেহে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের শোষণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, ফলে অন্য কোনো পুষ্টি উপাদানের অভাব দেখা যেতে পারে।

বাড়ন্ত শিশুর শরীরে জিংকের ঘাটতি দেখা দিলে অবশ্যই খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কথা ভাবার আগেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, এ ক্ষেত্রে দেরি করলে শিশুর বৃদ্ধির সুবর্ণ সময়টা হারিয়ে যেতে পারে।