জুলাই ২২, ২০২৫, ১১:৫৫ এএম
গত কয়েকদিন ধরে চলা ভারী বৃষ্টিপাত, ভূমিধস, আকস্মিক বন্যা এবং বজ্রপাতে পাকিস্তান এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। দেশজুড়ে এই দুর্যোগে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২১ জনে। জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) মঙ্গলবার (২২ জুলাই, ২০২৫) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। নিহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু ও নারী রয়েছেন, যা পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে।
জিওটিভি নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ জন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এই বর্ষা মৌসুমে মোট ৫৯২ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৭৭ জন পুরুষ, ৪০ জন নারী এবং ১০৪ জন শিশু। এটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, এই দুর্যোগ সব বয়সের মানুষকে প্রভাবিত করছে।
আমাদের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, পাকিস্তানের প্রতিটি প্রদেশেই এই দুর্যোগের প্রভাব পড়েছে। তবে, পাঞ্জাব সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত প্রদেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যেখানে ১৩৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৪৭০ জন আহত হয়েছেন।
অন্যান্য প্রদেশের ক্ষয়ক্ষতি নিম্নরূপ:
-
খাইবার পাখতুনখোয়া: ৪০ জন নিহত, ৬৯ জন আহত।
-
সিন্ধু: ২২ জন নিহত, ৪০ জন আহত।
-
বেলুচিস্তান: ১৬ জনের মৃত্যু।
-
আজাদ কাশ্মীর: ১ জন নিহত, ৬ জন আহত।
-
গিলগিট-বালতিস্তান: ৩ জন হতাহত।
-
ইসলামাবাদ: ১ জন নিহত।
বেশিরভাগ মৃত্যুর কারণ হিসেবে কাঠামোগত ধস, ডুবে যাওয়া, ভূমিধস, আকস্মিক বন্যা, বজ্রপাত এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই তথ্যগুলি দুর্যোগের বহুমুখী প্রকৃতি এবং এর ব্যাপক প্রভাবকে তুলে ধরে।
এনডিএমএ-র রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫টি বাড়ি সম্পূর্ণরূপে ধসে পড়েছে এবং পাঁচটি গবাদি পশু মারা গেছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে মোট ৮০৪টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে এবং ২০০টি গবাদি পশু প্রাণ হারিয়েছে।
সম্পত্তির ক্ষতির দিক থেকেও পাঞ্জাব সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে ১৬৮টি বাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। খাইবার পাখতুনখোয়ায় ১৪২টি বাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ৭৮টি ধসে পড়েছে। সিন্ধুতে ৫৪টি আংশিকভাবে এবং ৩৩টি সম্পূর্ণরূপে ধসে পড়েছে। বেলুচিস্তানে ৫৬টি বাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৮টি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছে। গিলগিট-বালতিস্তানে ৭১টি বাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ৬৬টি সম্পূর্ণরূপে বৃষ্টিতে ধ্বংস হয়েছে। আজাদ কাশ্মীরে ৭৫টি আংশিকভাবে ভেঙে পড়েছে এবং ১৭টি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছে। ইসলামাবাদে ৩৫টি আংশিকভাবে ধসে পড়েছে এবং একটি পূর্ণাঙ্গভাবে ধ্বংস হয়েছে।
এদিকে, কর্তৃপক্ষ নতুন করে বাবুসারে বন্যার জরুরি অবস্থা জারি করেছে। মুষলধারে বৃষ্টিপাতের ফলে বাবুসার টপের আশেপাশে ৭-৮ কিলোমিটার ব্যাসার্ধে আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসের সৃষ্টি হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১৪ থেকে ১৫টি সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে এবং আটকে পড়া পর্যটকদের নিরাপদে চিলাসে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জনসাধারণক বৃষ্টিপাতের সময় সতর্ক থাকতে এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ এলাকা, গিরিখাদ, পাহাড়ি ঢলের সম্ভাবনাপ্রবণ রাস্তা এবং নিচু এলাকা পরিহার করার নির্দেশ দিয়েছে। বজ্রপাতের ঝুঁকি এড়াতে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান না করা এবং বৈদ্যুতিক তার বা খুঁটি থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী দিনগুলোতে আরও ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে, যা পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটাতে পারে। মাঠ পর্যায়ে ঘুরে দেখা গেছে, এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার মানুষ এখন খাদ্য, আশ্রয় এবং চিকিৎসার মতো মৌলিক প্রয়োজনে ভুগছেন। সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকেও এই মানবিক সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীব্রতা ও পৌনঃপুনিকতা বাড়ছে। পাকিস্তানের মতো দেশগুলোর জন্য দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং প্রতিরোধের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এখন সময়ের দাবি।
এই ভয়াবহ দুর্যোগে পাকিস্তানের জনগণের পাশে দাঁড়াতে বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
আপনার মতামত লিখুন: