রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

চলতি বছর বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি যৌথ সামরিক মহড়া ও নতুন সামরিক সক্ষমতা হস্তান্তর: জাতীয় নিরাপত্তা জোরদারে নতুন দিগন্ত

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২০, ২০২৫, ০৪:১২ পিএম

চলতি বছর বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি যৌথ সামরিক মহড়া ও নতুন সামরিক সক্ষমতা হস্তান্তর: জাতীয় নিরাপত্তা জোরদারে নতুন দিগন্ত

জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চলতি বছর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী তিনটি যৌথ সামরিক মহড়া এবং একটি নতুন সামরিক সক্ষমতা হস্তান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে। আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুমে এই মহড়াগুলো অনুষ্ঠিত হবে বলে রোববার (২০ জুলাই, ২০২৫) মার্কিন দূতাবাসের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এই সহযোগিতা দুই দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে আরও গভীর করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর দীর্ঘদিনের সহযোগিতার অংশ হিসেবে এই মহড়াগুলো আয়োজন করা হচ্ছে। নিচে প্রতিটি মহড়ার বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:

১. টাইগার লাইটনিং মহড়া: চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ইউএস আর্মি প্যাসিফিক এই মহড়া পরিচালনা করবে। এই মহড়ায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান, শান্তিরক্ষা, জঙ্গলে যুদ্ধ, মেডিকেল ইভাকুয়েশন এবং আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) প্রতিরোধের মতো কৌশলগত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। এটি উভয় দেশের সেনাদের অপারেশনাল দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে।

২. টাইগার শার্ক ২০২৫: ২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া ‘টাইগার শার্ক’ যৌথ মহড়া ‘ফ্ল্যাশ বেঙ্গল’ সিরিজের অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনী নিয়ে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হবে। এই মহড়ায় প্যাট্রোল বোট পরিচালনা, ক্ষুদ্র অস্ত্রের ব্যবহারে দক্ষতা এবং বিশেষ অভিযান পরিচালনার কৌশল শেখানো হবে। মহড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত সরঞ্জাম ব্যবহারের মাধ্যমে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যা বাংলাদেশের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

৩. প্যাসিফিক অ্যাঞ্জেল মহড়া: এই মহড়াটি বাংলাদেশে চতুর্থবারের মতো অনুষ্ঠিত হবে। এতে দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যবহৃত সি-১৮০ বিমানবহরের গুরুত্ব তুলে ধরা হবে। এছাড়াও সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ (এসএআর) ও অ্যারোমেডিকেল অপারেশনের মাধ্যমে মানবিক সহায়তার সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এই মহড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, যৌথ মহড়াগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সঙ্গে মিলে একটি নতুন ইউএএস (মানববিহীন আকাশযান ব্যবস্থা) সক্ষমতা গড়ে তুলছে। আরকিউ-২১ ব্ল্যাকজ্যাক সিস্টেম পরিচালনার জন্য সেনা ও নৌ সদস্যদের নিয়ে একটি বিশেষ রেজিমেন্ট গঠন করা হবে। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা পর্যবেক্ষণ, সীমান্ত নিরাপত্তা এবং শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আরও দক্ষতা অর্জন করবে। এটি বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে।

 

এই যৌথ মহড়া এবং প্রযুক্তিগত সহায়তাগুলো দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও গভীর করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া নিরাপত্তা ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রেও এটি একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় এই ধরনের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।