বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫, ১২ ভাদ্র ১৪৩২

পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে কতটা লাভ হবে বাংলাদেশের?

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ২৩, ২০২৫, ১২:৫৮ পিএম

পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে কতটা লাভ হবে বাংলাদেশের?

ছবি- সংগৃহীত

দীর্ঘদিনের ভারসাম্যহীন বাণিজ্য সম্পর্ক এবং রাজনৈতিক শীতলতার পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার আলোচনা নতুন করে গতি পেয়েছে। সম্প্রতি পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খানের ঢাকা সফরকে ঘিরে এই আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো বাংলাদেশের জন্য কতটা লাভজনক হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ভারসাম্যহীন। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশে ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করেছে, অথচ বাংলাদেশ থেকে আমদানি করেছে মাত্র ৬৩ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। এই বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

অর্থনীতিবিদ ড. গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের রপ্তানি পণ্যের ধরন প্রায় একই রকম হওয়ায় এটি বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারের ক্ষেত্রে বড় বাধা। উভয় দেশই তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদন করে, যা বাংলাদেশের রপ্তানির সম্ভাবনাকে সীমিত করে।

দুই দেশের মধ্যে সরাসরি পরিবহন সংযোগের অভাব আরেকটি বড় সমস্যা। পণ্য পরিবহনের জন্য শ্রীলঙ্কা বা সিঙ্গাপুরের মতো তৃতীয় দেশের বন্দরের ওপর নির্ভর করতে হয়, যা পরিবহন ব্যয় ও সময় বাড়িয়ে দেয়। যদিও বাংলাদেশের খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার জানিয়েছেন, করাচি থেকে সরাসরি পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রামে আসা শুরু হয়েছে, তবে সামগ্রিকভাবে এই সীমাবদ্ধতা এখনো রয়ে গেছে।

তবে কিছু খাতে সম্ভাবনার আলো দেখছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, যেমন তুলা ও সুতা পাকিস্তান থেকে তুলনামূলক কম খরচে আমদানি করা যেতে পারে। আবার ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশের দক্ষতা পাকিস্তানের জন্য সহায়ক হতে পারে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে রপ্তানি-আমদানি ব্যবধান কমাতে একটি যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন (জেইসি) গঠন করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এই কমিশন খাদ্য ও মধ্যবর্তী পণ্যসহ অন্যান্য খাতে বাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগগুলো খতিয়ে দেখবে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে পট পরিবর্তনের পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে এক ধরনের শীতলতা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ বিকল্প বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহী বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে ড. গোলাম মোয়াজ্জেমের মতে, কোনো একমুখী সম্পর্ক গড়া উচিত নয়, বরং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রতিটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।