সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫, ১০:১৮ এএম
ভাষা একটি জাতির আত্মপরিচয়ের অন্যতম প্রধান অংশ। কিন্তু ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে বাংলাভাষীরা বর্তমানে তাদের সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব হারানোর ঝুঁকিতে আছে। এর প্রধান কারণ হলো হিন্দুত্ববাদী পুঁজিবাদ ও রাজনৈতিক আগ্রাসন। শাসকগোষ্ঠী নিজেদের ক্ষমতা সুসংহত করার জন্য একটি একক ভাষার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে, যা ভাষার বৈচিত্র্যকে ধ্বংস করছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় শাসকগোষ্ঠী ‘হিন্দু-হিন্দি-হিন্দুস্তানি’ নীতিকে সামনে এনে একটি ভাষাগত জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দিতে চাইছে। এর উদ্দেশ্য হলো উত্তর ভারতের ক্ষমতা কাঠামোকে শক্তিশালী করা এবং হিন্দিকে একক জাতীয় পরিচয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এটি কেবল সাংস্কৃতিক নয়, বরং একটি পুঁজিবাদী-রাজনৈতিক প্রকল্প, যা বহুভাষিক ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। এই দুই রাজ্যে শিল্প ও কর্মসংস্থান সীমিত হওয়ায় বাংলাভাষী মানুষ কাজের সন্ধানে অন্য রাজ্যে যাচ্ছে। সেখানে তারা প্রায়ই ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষার ব্যবহার কমে যাচ্ছে এবং তরুণ প্রজন্মকে বোঝানো হচ্ছে যে, হিন্দি বা ইংরেজি শিখলেই কেবল উন্নত শিক্ষা ও ক্যারিয়ার সম্ভব।
কলকাতার তরুণ সমাজে হিন্দি সিনেমা, গান এবং বিনোদনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলস্বরূপ, বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি ধীরে ধীরে মূলধারা থেকে সরে যাচ্ছে। আসামে বাংলাভাষীদের প্রায়ই রাজনৈতিক প্রচারণার মাধ্যমে ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যা তাদের জীবন ও কর্মের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলে দেয়। এটি কেবল ভাষাগত বৈষম্য নয়, বরং এক ধরনের জাতিগত নিপীড়ন।
ভারতে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা নতুন নয়। ১৯৬৫ সালে তামিলনাড়ুতে এর বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী এখনো একই নীতিতে অটল। বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য এখন প্রয়োজন একটি ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক চেতনা, সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগ। ভাষার উপযোগিতা ধরে রাখাই পারে একটি ভাষাকে জীবিত রাখতে।