শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

জুলাই গণঅভ্যুত্থান: আওয়ামী লীগ নেতাদের মন্তব্য ও সরকারের পতন

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ৩১, ২০২৫, ০৯:৪৭ এএম

জুলাই গণঅভ্যুত্থান: আওয়ামী লীগ নেতাদের মন্তব্য ও সরকারের পতন

ছবি- সংগৃহীত

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের, বিশেষ করে ওবায়দুল কাদের, শেখ হাসিনা এবং জাহাঙ্গীর কবির নানকের মন্তব্যগুলো কীভাবে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনকে তীব্র করে তুলেছিল এবং শেষ পর্যন্ত সরকারের পতনে ভূমিকা রেখেছিল, তার একটি বিশ্লেষণ এখানে তুলে ধরা হলো।

এই আলোচনায় দেখা গেছে, ওবায়দুল কাদের, শেখ হাসিনা এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক সহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য ছাত্র-নেতৃত্বাধীন কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কীভাবে আরও তীব্র করে তুলেছিল, যা শেষ পর্যন্ত সরকারের পতনের কারণ হয়।

আওয়ামী লীগ নেতাদের মন্তব্যের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্য প্রায়শই বিক্ষোভকে তীব্র করে তুলেছিল। ১৫ জুলাই তার মন্তব্য ছিল, "ছাত্রলীগই আন্দোলনকারীদের জবাব দিতে যথেষ্ট"। এর ফলে সংগঠনটির নেতাদের সহিংসতায় উস্কে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ৪ থেকে ৮ জুলাইয়ের মধ্যে তিনি বলেছিলেন যে, "আন্দোলনকারীদের ছাত্র বলা কঠিন" এবং "এখানে রাজনীতি ঢুকে গেছে" যেখানে "রাজনৈতিক উপাদান" রয়েছে। এর ফলে ছাত্রদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তিনি আরও একটি "আত্মঘাতী মন্তব্য" করেন যে, "যারা চেতনা ধারণ করে, ছাত্রলীগ তাদের জবাব দেবে," যা ছাত্রলীগ এবং সাধারণ ছাত্রদের সরাসরি সংঘাতের মুখে ফেলে দেয়। ১৯ জুলাই তিনি দলীয় কর্মীদের পক্ষ সমর্থন করে দাবি করেন যে, "ছাত্রলীগ হামলা করেনি, বরং ছাত্রলীগের উপর হামলা হয়েছে।" ২৯ জুলাই তিনি মধ্যরাত থেকে কারফিউ ঘোষণা করেন, যেখানে "দেখামাত্র গুলির" নির্দেশ ছিল বলে জানান।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন যে, "মৃত্যুর দায় শিক্ষার্থীদের নিতে হবে," যা আন্দোলনকারীদের আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে। ২১ জুলাই তিনি পুনরায় বলেন যে, "আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদেরই এই হত্যাকাণ্ডের দায় নিতে হবে।"

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পূর্ববর্তী একটি মন্তব্য, যেখানে তিনি "শিক্ষার্থীদের রাজাকার হিসেবে ট্যাগ করেছিলেন," সেটি দলত্যাগ এবং চূড়ান্ত পতনের ক্ষেত্র তৈরি করে। ১৪ জুলাই চীন সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জুলাই আন্দোলনের "সবচেয়ে আত্মঘাতী মন্তব্য" করেন, প্রশ্ন করে বলেন, "তাহলে কি মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের ছেলে-মেয়েরা বুদ্ধিমান নয়, শুধু রাজাকারের ছেলে-মেয়েরাই বুদ্ধিমান?" এই "রাজাকার ট্যাগিং" ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভের জন্ম দেয়। পরে তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন "দেশকে এই খুনি ও অত্যাচারীদের হাত থেকে মুক্তি দিতে।"

সহিংসতা ও বিক্ষোভের তীব্রতা বাড়তে থাকে। ১১ জুলাই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের মধ্যে প্রথম সরাসরি সংঘর্ষ হয়, যার ফলে ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন যে, "কোটা আন্দোলনকারীরা সীমা অতিক্রম করছে, এবং পুলিশ চুপ করে বসে থাকবে না," এরপর পুলিশ আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রীর "রাজাকার ট্যাগিং" এর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রলীগ কর্মীরা "বেপরোয়া" হয়ে ওঠে, ঘোষণা করে যে কোটা সংস্কারপন্থীদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ১৫ জুলাই ছাত্রলীগ সদস্যদের দ্বারা ছাত্র আন্দোলনকারীদের উপর হামলা "শেখ হাসিনার পতনের পথ" তৈরি করে। আইনমন্ত্রী বলেছিলেন যে, "আদালতের আদেশের পর কোটা আন্দোলনের কোনো প্রয়োজন ছিল না।" ২১ জুলাই সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ দাবি করেন যে, "ধর্মীয় উগ্রবাদীরা সারাদেশে নাশকতা চালিয়েছে," যার ফলে আন্দোলনকারীদের "জঙ্গি ও ধর্মীয় উগ্রবাদী" হিসেবে আখ্যায়িত করায় রাস্তায় হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ ছিল অত্যন্ত দ্রুত। ২৮ জুলাই সরকার নিহতদের পরিবারকে, যার মধ্যে আবু সাইদও ছিলেন, গণভবনে আমন্ত্রণ জানায়, যেখানে শেখ হাসিনা তাদের কাছে দোয়া চান। আট দিন পর, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।