আগস্ট ১৬, ২০২৫, ০৫:০৩ পিএম
মানবজাতির জন্য আল্লাহ যে খাবারকে হালাল করেছেন, তা মানবদেহে শক্তি জোগায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কিন্তু বর্তমানে একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে খাদ্যে ভেজাল মেশানো, যা জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। অত্যধিক লাভের আশায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক, ফরমালিন এবং রং মিশিয়ে এটিকে আকর্ষণীয় করে তুলছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে, পণ্যে ভেজাল মেশানো এবং ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা করা একটি গুরুতর অপরাধ। ইসলাম ব্যবসায় সততা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখার শিক্ষা দেয়। মহানবী (সা.) বলেছেন, “সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ী হাশরের দিন নবী, সিদ্দিক এবং শহীদদের সঙ্গী হবেন।” (তিরমিজি, হাদিস: ১২০৯)। অন্যদিকে, অসৎ ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে হাদিসে কঠোর সতর্কবাণী বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীদের পাপীরূপে উঠানো হবে, তবে যেসব ব্যবসায়ী আল্লাহকে ভয় করে, কল্যাণের কাজ করে ও সততা ধারণ করে তারা ব্যতীত।” (তিরমিজি, হাদিস: ১২১০)।
ভেজালবিরোধী অভিযানে প্রায়শই অসাধু ব্যবসায়ীদের যে কুৎসিত চিত্র ফুটে ওঠে, তা একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। বাজারে যেন এমন কোনো পণ্য নেই যা ভেজালমুক্ত। অখাদ্য ও কুখাদ্য দেদারসে বিক্রি হচ্ছে এবং ভোক্তারা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে।
ইসলামে পণ্যে ভেজালের কঠোর নিন্দা করা হয়েছে। মহানবী (সা.) একদিন একটি শস্যস্তূপের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শস্যের ভেজা অংশটি নিচে দেখতে পান। তিনি শস্যের মালিককে বলেন, “তাহলে ভেজা অংশ শস্যের ওপরে রাখলে না কেন—যাতে ক্রেতারা তা দেখে কিনতে পারে? নিশ্চয়ই যে প্রতারণা করে সে আমার উম্মত নয়।” (মুসলিম, হাদিস: ১০২)। এই হাদিস থেকে স্পষ্ট হয় যে পণ্যের ত্রুটি গোপন করা বা তাতে ভেজাল মেশানো ইসলামের দৃষ্টিতে গুরুতর অন্যায়।
এছাড়াও, ওজনে কম দেওয়াও একটি মারাত্মক অপরাধ। মহান আল্লাহ বলেন, “যারা ওজনে কম দেয় তাদের জন্য ধ্বংস। তারা যখন লোকজনের কাছ থেকে কিছু মেপে নেয়, তখন পুরোপুরি নেয়। আর যখন তাদের মেপে দেয় তখন কম করে দেয়। তারা কি ভেবে দেখে না যে, তারা সেই কঠিন দিনে পুনরুত্থিত হবে, যেদিন সব মানুষ আপন প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে?” (সূরা মুতাফ্ফিফিন: ১-৫)।
ইসলামী নীতি অনুসারে, একজন সৎ ব্যবসায়ীর কর্তব্য হলো পণ্যের ত্রুটি সম্পর্কে ক্রেতাকে অবগত করা এবং কোনো ধরনের প্রতারণা বা মিথ্যা শপথ থেকে দূরে থাকা। কারণ, ব্যবসা-বাণিজ্যে সততা, সত্যবাদিতা এবং বিশ্বস্ততা রক্ষা করলে এটি শুধু একটি উত্তম পেশা নয়, বরং ইবাদতও বটে। অন্যদিকে, অসৎ উপায়ে ব্যবসা করলে তা পরকালে কঠিন শাস্তির কারণ হবে।