মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

গোলাপগঞ্জে ছাগলের জমজমাট হাট

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৯, ২০২৫, ১২:১৪ পিএম

গোলাপগঞ্জে ছাগলের জমজমাট হাট

ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে পশুপালনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে ছাগল পালন অনেক প্রান্তিক কৃষক ও ক্ষুদ্র খামারির জীবিকা নির্বাহের অন্যতম প্রধান উৎস। দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত বসে পশুর হাট, যেখানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ছাগল বেচাকেনা হয়। তবে বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য, সেই সাথে গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি—এসব বিষয় সরাসরি পশুর দামকে প্রভাবিত করে। সম্প্রতি দিনাজপুরের গোলাপগঞ্জ হাটে ছাগলের জমজমাট বেচাকেনা চললেও দাম কমে যাওয়ায় বিক্রেতারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার অন্যতম পরিচিত বাণিজ্যিক কেন্দ্র গোলাপগঞ্জ হাট। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে এই হাট বসে এবং বিশেষ করে পশুর হাটের জন্য এর সুনাম রয়েছে। সম্প্রতি, এই হাটে ছাগলের বেচাকেনা বেশ জমজমাট দেখা যাচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে খামারিরা তাদের পালিত ছাগল নিয়ে আসছেন, আর ক্রেতারাও আসছেন নিজেদের পছন্দের ছাগল কিনতে। হাটে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে বিভিন্ন আকারের ছাগলের সারি এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাক।

হাটে ক্রেতাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো হলেও, বিক্রেতাদের মুখে হাসি নেই। তাদের অভিযোগ, ছাগলের দাম প্রত্যাশিত মাত্রায় নেই। অনেক বিক্রেতা জানান, তারা যে দামে ছাগল বিক্রি করছেন, তাতে তাদের লালন-পালনের খরচও উঠছে না। গত বছর যে ছাগল ৫-৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল, এবার একই আকারের ছাগল ৪-৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে তাদের লোকসান হচ্ছে বলে দাবি করছেন তারা।

বিক্রেতারা বলছেন, গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং ছাগল পালনের অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় তাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় বাজারে ছাগলের দাম বাড়েনি, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমেছে। হাটে ছাগলের সরবরাহ বেশি থাকায় এবং ক্রেতারা কম দামে কেনার প্রবণতা দেখানোর কারণে দাম কমে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। অনেক ছোট খামারি যারা অল্প সংখ্যক ছাগল পালন করেন, তারা এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

অন্যদিকে, ক্রেতারা বলছেন, তাদের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় বর্তমান দাম ঠিকই আছে। তারা বলছেন, বাজারে ছাগলের সরবরাহ ভালো থাকায় পছন্দের ছাগল বেছে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন এবং তুলনামূলক কম দামে কিনতে পারছেন। এই হাটে দেশি জাতের ছাগলের পাশাপাশি যমুনাপারি, ব্ল্যাক বেঙ্গলসহ বিভিন্ন জাতের ছাগল দেখা যাচ্ছে। ছোট ও মাঝারি আকারের ছাগলের চাহিদা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা সাধারণত ৪ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। বড় আকারের ছাগলের দাম ১৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠছে।

হাটের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা অবশ্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা বলছেন, সরবরাহ বেশি থাকলে দাম কিছুটা কমে যাওয়া স্বাভাবিক। তবে, খামারিদের যাতে লোকসান না হয়, সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে। এই হাটের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিতে ছাগল পালনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, যা অনেক পরিবারের জীবিকা নির্বাহে সহায়তা করে।

গোলাপগঞ্জ হাটের এই চিত্রই বলে দেয়, বাজারে পণ্য বেশি থাকলে দামের উপর তার প্রভাব পড়ে। ছাগল বিক্রেতাদের এই লোকসানের অভিযোগ এবং ক্রেতাদের স্বস্তির মাঝে একটি ভারসাম্য আসা জরুরি।