আগস্ট ১৪, ২০২৫, ০৬:৫৩ পিএম
রাসুলের রওজা প্রাঙ্গণে গজল গেয়ে বিতর্কের মুখে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এক হাফেজ। আটকের খবরকে বানোয়াট দাবি করে ভিডিও বার্তায় জানালেন আসল ঘটনা, যা এই বিতর্ককে এক নতুন রহস্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
ইসলামের অন্যতম পবিত্র স্থান, হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারককে কেন্দ্র করে সম্প্রতি এক অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্কে জড়িয়েছেন আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলাদেশি হাফেজ আবু রায়হান ও তার সফরসঙ্গী আব্দুল কাইয়ুম মোল্লা। একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদে দাবি করা হয়, রওজা মোবারকের মতো পবিত্র ও সংবেদনশীল স্থানে গজলের ভিডিও শুটিং করার মতো গুরুতর অভিযোগে সৌদি আরবের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের আটক করেছিল এবং পরবর্তীতে মুচলেকা নিয়ে মুক্তি দেয়। এই খবর প্রকাশের সাথে সাথেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকেই এটিকে রাসুলের শানে চরম বেয়াদবি বলে আখ্যা দেন। কিন্তু এই অভিযোগকে পুরোপুরি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন হাফেজ আবু রায়হান ও তার সঙ্গী। তাদের এই পাল্টা জবাবে মূল ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়েছে ব্যাপক ধোঁয়াশা, এবং এই পরস্পরবিরোধী বক্তব্যগুলো পুরো ঘটনাকে একটি জটিল মোড় দিয়েছে, যার প্রতিটি দিক দিনাজপুর টিভি তার দর্শক-শ্রোতাদের জন্য তুলে ধরছে।
প্রকাশিত সংবাদটিতে সৌদি প্রবাসী এক বাংলাদেশির বরাত দিয়ে বলা হয়েছিল, আজ ১৪ আগস্ট ফজরের নামাজের পর হাফেজ আবু রায়হান রওজার সামনে হেঁটে হেঁটে একটি গজলের ভিডিও ধারণ করছিলেন। এই সময় তার ভিডিওতে মদিনা শরিফের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক খাদেমের ইউনিফর্ম পরা ছবি চলে আসায় বিষয়টি সেখানকার সাদাপোশাকধারী সিআইডির নজরে আসে। সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী, হেরেম শরিফের কর্মীদের ছবি বা ভিডিও ধারণ করা অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়। প্রশাসন এই ঘটনাকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে প্রথমে আবু রায়হান ও পরে ভিডিও ধারণকারী আব্দুল কাইয়ুম মোল্লাকে আটক করে। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর ভবিষ্যতে এমন কাজ করবেন না—এই মর্মে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
তবে এই খবরটি যখন তুমুল সমালোচনার জন্ম দেয়, ঠিক তখনই সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি চিত্র তুলে ধরে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন অভিযুক্ত হাফেজ আবু রায়হান ও তার সফরসঙ্গী আব্দুল কাইয়ুম মোল্লা। তাদের দাবি, পুরো ঘটনাটি ছিল একটি সাধারণ ভুল বোঝাবুঝি, যাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রচার করা হয়েছে। আব্দুল কাইয়ুম মোল্লার ভাষ্যমতে, এটি কোনো পরিকল্পিত ‘শুটিং’ ছিল না।
ফজরের নামাজের পর তারা যখন মসজিদের বাইরে আসেন, তখন কিছু ভক্ত-অনুরাগী তাদের ঘিরে ধরেন। সেই ভক্তদের মধ্যে মদিনা শরিফের একজন বাংলাদেশি খাদেমও ছিলেন, যিনি আবু রায়হানকে তার একটি বিখ্যাত গজল গাওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। ভক্তের সেই আবদার মেটাতেই আবু রায়হান সেখানে দাঁড়িয়ে গজলের কয়েকটি লাইন পরিবেশন করেন। এসময় কিছু মানুষের ভিড় জমে যাওয়ায় সিআইডি সদস্যরা স্বাভাবিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এগিয়ে আসেন।
ভিডিও বার্তায় তারা ‘আটক’ এবং ‘মুচলেকা’ দেওয়ার বিষয়টিকে জোরালোভাবে অস্বীকার করে বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কেবল ভিড়ের কারণ জানতে চেয়েছিল এবং পরিস্থিতি বোঝার জন্য তাদের অফিসে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে তাদের মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে এবং গজলটি শোনার পর যখন তারা নিশ্চিত হন যে এতে আপত্তিকর কিছু নেই, তখন তাদের সম্মানের সাথেই ছেড়ে দেওয়া হয়। আব্দুল কাইয়ুম বলেন, "অপরাধীদের আটক করা হয়, আমরা তো অপরাধী নই।
মুচলেকা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না, কারণ আমরা কোনো অপরাধ করিনি।" তারা আরও দাবি করেন, যে প্রবাসী বাংলাদেশি তাদের সাহায্য করার কথা বলে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন, তিনি আসলে পুরো ঘটনা না জেনেই বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করেছেন, যা তাদের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করেছে। হাফেজ আবু রায়হান তার ভক্তদের ভালোবাসাকে এই পরিস্থিতির কারণ হিসেবে উল্লেখ করে সবাইকে অনুরোধ করেন, তারা যেন কোনো সংবাদ যাচাই না করে বিশ্বাস বা প্রচার না করেন।
একদিকে গুরুতর অভিযোগ, অন্যদিকে সম্পূর্ণ অস্বীকার—এই দ্বিমুখী বক্তব্যের ভিড়ে প্রকৃত সত্য এখনো ধোঁয়াশায়। কোনটি সত্য, আর কোনটি রটনা, তা হয়তো সময়ই বলে দেবে, কিন্তু এই ঘটনা পবিত্র স্থানের সম্মান রক্ষার গুরুত্ব নতুন করে সামনে এনেছে।