শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

ডলি জহুরের অভিনয় থেকে গুটিয়ে নেওয়ার কারণ, যা বললেন অভিনেত্রী

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৫, ২০২৫, ১২:২৫ পিএম

ডলি জহুরের অভিনয় থেকে গুটিয়ে নেওয়ার কারণ, যা বললেন অভিনেত্রী

ছবি- সংগৃহীত

দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে সাবলীল অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের মন জয় করেছেন কিংবদন্তি অভিনয়শিল্পী ডলি জহুর। তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রী বর্তমানে অভিনয়ে বেশ অনিয়মিত। বিশেষ করে সিনেমায় তার উপস্থিতি প্রায় নেই বললেই চলে। সম্প্রতি একটি নতুন ধারাবাহিক নাটকে যুক্ত হলেও তার কাজের পরিমাণ অনেকটাই কমে গেছে। তার এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মনে কৌতূহল ছিল দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে তিনি তার এই অনিয়মিত হওয়ার কারণগুলো স্পষ্ট করেছেন।

কিংবদন্তি অভিনয়শিল্পী ডলি জহুরকে বর্তমানে মঞ্চ, টিভি নাটক ও সিনেমায় খুব একটা নিয়মিত দেখা যায় না। কাজের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি জানিয়েছেন, একঘেয়েমি এবং বর্তমান কাজের ধরনই এর মূল কারণ। যুগান্তরের 'হ্যালো...' বিভাগে সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি তার দীর্ঘ অভিনয় জীবনের অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান ইন্ডাস্ট্রির পরিস্থিতি নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন।




অভিনয়ে অনিয়মিত হওয়ার প্রসঙ্গে ডলি জহুর বলেন, "একঘেয়েমি চলে এসেছে। কারণ এখনকার অধিকাংশ কাজেই ঘুরেফিরে একই গল্প ও চরিত্র। তাই ইচ্ছা করে না আর অভিনয় করতে। সিনেমা ছেড়েছি এজন্যই।" তিনি আরও যোগ করেন, বয়সের কারণে এখন তাকে মা চরিত্রের জন্যই বেশি ডাকা হয়, কিন্তু সেগুলোতে পর্দায় উপস্থিতি কম থাকে এবং চরিত্রের কোনো গুরুত্বও থাকে না। এমন চরিত্রে কাজ করতে চান না বলেই জানান তিনি। তবে ব্যতিক্রমী কিছু পেলে নাটকে এখনও কাজ করেন। নিজের অর্জিত সম্মান ও মানুষের ভালোবাসা নিয়েই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চান তিনি।

কাজ না করার জন্য আফসোস হয় কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ডলি জহুর বলেন, "আফসোস না ঠিক, তবে কষ্ট হয়। একজন অভিনয়শিল্পীর যে অভিনয়ের ক্ষুধা সেটা মেটানোর মতো কাজ এখন করতে পারছি না। এ জায়গাটায় একটু কষ্ট হয়।" পেশাদার অভিনয়শিল্পী হিসেবে সারা জীবন অভিনয় করেই কাটিয়ে দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কখনো সম্মানির কথা ভাবেননি, শুধু অভিনয়টাই মন দিয়ে করেছেন এবং মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন শুধু অভিনয়ের জন্যই।

বর্তমান ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে তার অভিমত জানতে চাইলে তিনি বলেন, "এখন তো মানুষের মধ্যেই নিখাদ ভালোবাসার ব্যাপারটি আর নেই। এখন আবেগ ও ভালোবাসা সবই আমার কাছে কৃত্রিম মনে হয়। সবাই এখন নিজেদের পকেট ভারী করা নিয়েই ব্যস্ত। কেউ ইন্ডাস্ট্রির বা সমাজ ও দেশের মঙ্গল হোক, সেটা চায় না।" তার মতে, মানুষ দিন দিন নিষ্ঠুর হয়ে যাচ্ছে এবং চারপাশের মানুষের মধ্যে এত পরিবর্তন যেখানে, সেখানে ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আর আলাদা করে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। তবে এ বয়সে এসব দেখতে খারাপ লাগে বলে জানান তিনি।

একমাত্র সন্তান অস্ট্রেলিয়ায় থাকা সত্ত্বেও কেন তার কাছে চলে যান না, এমন প্রশ্নের জবাবে ডলি জহুর বলেন, "মাঝে মাঝে মনে হয় চলেই যাই। কিন্তু আবার যখন দেশের মানুষের কষ্ট দেখি, তখন মনে হয় এদের ছেড়ে কোথায় যাব।" তিনি মনে করেন, দেশে থাকলেও অন্তত বেকার শিল্পীদের পাশে থাকা যায়। অস্ট্রেলিয়ায় গেলে তিনি যেন একটি গণ্ডির মধ্যে বন্দি থাকেন বলে মনে করেন, যা তার ভালো লাগে না। দেশের খোলা আকাশ, পরিচিত মানুষজন, চেনা পরিবেশেই তার আনন্দ।

তার কাছে সবচেয়ে বড় পুরস্কার কী, জানতে চাইলে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই কিংবদন্তি অভিনেত্রী মানুষের ভালোবাসাকেই সবার উপরে স্থান দেন। তিনি বলেন, "শিল্পী জীবনে এত এত মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, যা বলে শেষ করতে পারব না। দর্শকই আমার মাথার মুকুট। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি অবশ্যই বড় কিছু। কিন্তু দর্শকদের ভালোবাসাও কোনোভাবে উপেক্ষা করা যাবে না।"