আগস্ট ১৬, ২০২৫, ১০:০৭ এএম
বার্ধক্য মানব জীবনের এক অনিবার্য প্রক্রিয়া, যা সবার আগে চোখে পড়ে ত্বকে। তবে বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক এক গবেষণা এই ধারণাকে নতুন করে ভাবার সুযোগ করে দিয়েছে। তাদের দাবি, তরুণদের রক্ত বয়স্কদের শরীরে সঞ্চারিত করলে শুধুমাত্র বাহ্যিক রূপচর্চা নয়, বরং কোষীয় পর্যায়ে ত্বকের বয়স কমানো সম্ভব। এই গবেষণা স্বাস্থ্য ও অ্যান্টি-এজিং গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি জার্মানির বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান বেইয়ার্সডর্ফ এজি-এর বিজ্ঞানীরা একটি যুগান্তকারী গবেষণা পরিচালনা করেছেন। তারা গবেষণাগারে মানুষের ত্বকের মডেল তৈরি করে তাতে তরুণ রক্তের সিরাম (রক্তরস) প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষা করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে এতে ত্বকের কোষে সরাসরি কোনো প্রভাব না পড়লেও, যখন এর সঙ্গে হাড়ের অস্থিমজ্জা কোষ (বোন ম্যারো সেল) যুক্ত করা হয়, তখন ত্বকের কোষে বয়স কমার লক্ষণ দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, অস্থিমজ্জা কোষের সঙ্গে তরুণ রক্তের সিরাম বিশেষ পদ্ধতিতে সংযুক্ত হয়ে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে, যা কোষের বয়স কমানোর জন্য সহায়ক।
এই গবেষণা সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা তাদের প্রকাশিত গবেষণাপত্রে লিখেছেন, “ত্বক আমাদের দেহের সবচেয়ে বড় অঙ্গ এবং বার্ধক্য নিয়ে গবেষণা করার জন্য এটি সবচেয়ে উপযোগী। কারণ বার্ধক্যের লক্ষণগুলো সবার আগে ত্বকেই প্রকাশ পায়। মানুষের সার্বিক স্বাস্থ্য তার ত্বকে প্রতিফলিত হয়।” তারা ত্বকের টিস্যুর বয়স নির্ধারণ করতে ডিএনএ মিথাইলেশন এবং কোষের বিস্তারের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। এই পরীক্ষাগুলোতে দেখা গেছে, তরুণ রক্তরস ও অস্থিমজ্জা কোষের সংস্পর্শে ত্বকের বয়স বাস্তবিকই হ্রাস পেয়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিতে তারা ৫৫টি ভিন্ন ভিন্ন প্রোটিন চিহ্নিত করেছেন, যার মধ্যে অন্তত সাতটি যেকোনো ত্বকের তারুণ্যের জন্য উপযোগী। তারা জোর দিয়ে বলেন, এই প্রোটিনগুলো নিয়ে আরও গভীর গবেষণা প্রয়োজন। তবে প্রাথমিক ফলাফলে তারা অত্যন্ত আশাবাদী। এই গবেষণা যদি ভবিষ্যতে আরও সফল হয় এবং মানুষের ওপর এর কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়, তবে তা বার্ধক্যজনিত সমস্যা মোকাবিলায় একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। এতে করে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের জীবনের শেষ দিনগুলোও আরও সতেজ ও সবল হতে পারে।