আগস্ট ১৬, ২০২৫, ১০:৫৬ এএম
হার্নিয়া একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও এই রোগ সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা খুবই কম। এই রোগকে অবহেলা করলে এটি বড় ধরনের বিপদ, এমনকি প্রাণঘাতীও হতে পারে। আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, হার্নিয়া হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে পেটের দুর্বল অংশের পেশী বা কলা ভেদ করে কোনো অভ্যন্তরীণ অঙ্গ বা তার অংশ বাইরে বেরিয়ে আসে। এর ফলে শরীরের ওই অংশে একটি অস্বাভাবিক ফোলা বা পিণ্ড দেখা যায়, যা কখনো ব্যথাযুক্ত বা ব্যথাহীন হতে পারে। এই সমস্যাটি শিশুদের থেকে শুরু করে বয়স্কদের মধ্যেও দেখা যেতে পারে।
সাধারণত, হার্নিয়া বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন— ইনগুইনাল (কুঁচকিতে), আম্বিলিকাল (নাভিতে) বা হাইয়াটাল (ডায়াফ্রামে)। হার্নিয়ার প্রধান কারণগুলো হলো জন্মগত ত্রুটি, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পেশীর দুর্বলতা এবং অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলত্ব। এছাড়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রস্টেট বৃদ্ধির কারণে চাপ দিয়ে প্রস্রাব করা, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, পেটে আঘাত বা অস্ত্রোপচার, অতিরিক্ত ভারী ওজন উত্তোলন এবং ধূমপানের মতো অভ্যাসও এই সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হার্নিয়ার সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হলে এটি জটিল আকার ধারণ করতে পারে। হার্নিয়ার ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসা খাদ্যনালী যদি কোনো কারণে জড়িয়ে যায়, তখন অসহ্য ব্যথা ও বমি হতে পারে। এই অবস্থাকে অবস্ট্রাকটিভ হার্নিয়া বা স্ট্রাঙ্গুলেটেড হার্নিয়া বলা হয়, যা জরুরি চিকিৎসা না করা হলে প্রাণঘাতীও হতে পারে। তাই হার্নিয়া হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া এবং প্রয়োজনীয় অপারেশন করে নেওয়া জরুরি।
একটি লক্ষণীয় বিষয় হলো, হার্নিয়ার চিকিৎসা ওষুধের মাধ্যমে সম্ভব নয়। একমাত্র অপারেশনের দ্বারাই এর স্থায়ী সমাধান সম্ভব। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এখন হার্নিয়ার অপারেশন অনেক উন্নত হয়েছে এবং ল্যাপারোস্কপি সার্জারি বা মিনিমালি ইনভেসিভ (MIS) পদ্ধতিতে করা হয়। এই পদ্ধতিতে কয়েকটি ছোট ছিদ্র করে দূরবীনের সাহায্যে অপারেশন করা হয় এবং একটি জালি (Mesh) বসিয়ে হার্নিয়া মেরামত করা হয়। এই উন্নত সার্জারির ফলে রোগী দ্রুত সুস্থ হতে পারেন, ব্যথাও কম হয় এবং স্বাভাবিক জীবনে খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসা সম্ভব। বর্তমানে রোবটিক সার্জারির মাধ্যমেও হার্নিয়ার চিকিৎসা করা হচ্ছে।
হার্নিয়া প্রতিরোধে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। চিকিৎসকরা মনে করেন, অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান ত্যাগ, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ এবং ভারী ওজন তোলার সময় সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করার মাধ্যমে এই রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।