রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাত: নেপথ্যে জমি ও রাজনীতি?

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৪, ২০২৫, ০৪:৪৫ পিএম

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাত: নেপথ্যে জমি ও রাজনীতি?

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত বিরোধ নতুন নয়। ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কিছু সীমান্ত অঞ্চলের মালিকানা নিয়ে মতবিরোধ চলে আসছে। তবে সম্প্রতি এই বিরোধ আকস্মিকভাবে সহিংস রূপ ধারণ করেছে, যা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মে মাস থেকে শুরু হওয়া এই সংঘাত শুধু সামরিক পর্যায়েই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এই অস্থিরতার নেপথ্যে শুধু সীমান্ত বিতর্কই নয়, বরং থাইল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মাঝে আকস্মিক এই সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছিল গত মে মাসে। ওই সময় থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওস সীমান্তের সংযোগকারী 'এমেরাল্ড ট্রায়াঙ্গল' অঞ্চলে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সৈন্যদের মাঝে সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে কম্বোডিয়ার একজন সৈন্য নিহত হন, যা উত্তেজনাকে বাড়িয়ে তোলে।


মে মাসের ওই ঘটনায় উভয় দেশের সামরিক বাহিনীই জানায় যে তারা আত্মরক্ষার্থে ব্যবস্থা নিয়েছে এবং সংঘর্ষের জন্য পরস্পরকে দায়ী করে। প্রাথমিকভাবে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সামরিক নেতারা উত্তেজনা কমানোর প্রত্যাশা করলেও বাস্তবে দুই দেশই সীমান্তে সেনা মোতায়েন জোরদার এবং একে অপরকে হুঁশিয়ারি দিতে শুরু করে।

পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যায় যখন থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত চেকপয়েন্টের নিয়ন্ত্রণ নেয়। একই সঙ্গে সীমান্ত পারাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় এবং থাই কর্তৃপক্ষ কম্বোডিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন বিভিন্ন শহরে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। এর জবাবে কম্বোডিয়া থাইল্যান্ড থেকে ফল ও সবজি আমদানি বন্ধ করে দেয়। শুধু তাই নয়, থাই সিনেমা ও টেলিভিশন নাটকের সম্প্রচারেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটি।

 

সম্প্রতি সীমান্ত এলাকায় একের পর এক স্থলমাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যা প্রতিবেশী দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে চরম অবনতি ঘটায়। এর জেরে উভয় দেশ নিজেদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সীমিত করে ফেলে এবং কূটনীতিকদের ফিরিয়ে নেয়। গত ১৬ জুলাই এক বিস্ফোরণে থাইল্যান্ডের এক সেনা পা হারান। পরবর্তী বিস্ফোরণ ঘটে গত বুধবার, যেখানে থাইল্যান্ডের অন্তত পাঁচ সৈন্য আহত হন এবং তাদের একজনের পা উড়ে যায়। বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষে এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে।

 

এই সীমান্ত সংকট থাইল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। গত ১ জুলাই দেশটির প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন শিনাওয়াত্রাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। জুন মাসে কম্বোডিয়ার সাবেক ক্ষমতাধর নেতা হুন সেনের সঙ্গে তার একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছিল। ওই ফোনালাপে তিনি নিজ দেশের সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনামূলক মন্তব্য করেছিলেন। মাত্র ৩৮ বছর বয়সে থাইল্যান্ডের সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া শিনাওয়াত্রা ফাঁস হওয়া ওই ফোনালাপে সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে মতপার্থক্যের ইঙ্গিত দেওয়ায় স্থায়ীভাবে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন।