সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২

কৈশোরে সন্তানকে স্বাধীনতা: কতটুকু ও কেন? বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ১৬, ২০২৫, ১০:১৮ এএম

কৈশোরে সন্তানকে স্বাধীনতা: কতটুকু ও কেন? বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

ছবি- সংগৃহীত

সন্তান যখন শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পদার্পণ করে, তখন তাদের মধ্যে নিজস্বতা এবং স্বাধীনতা লাভের এক তীব্র আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়। এই সময়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে তাদের এক ধরনের সংঘাত শুরু হয়, কারণ অভিভাবকরা সাধারণত সন্তানের প্রতিটি বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ রাখতে চান। এই সংঘাত অনেক সময় বাবা-মা ও সন্তানের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে। এই পরিস্থিতিতে সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করাটা অত্যন্ত জরুরি। তাই কৈশোরে সন্তানকে ঠিক কতটা স্বাধীনতা দেওয়া উচিত—এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে আমাদের এই লাইফস্টাইল প্রতিবেদন।

আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, মনোবিদরা মনে করেন, কৈশোর হলো এমন একটি সময় যখন সন্তানরা নিজেদের ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করে। তাই তাদের সবসময় কঠোর বাঁধনে বেঁধে রাখা উচিত নয়। আবার অতিরিক্ত স্বাধীনতা দিলে তারা ভুল পথে চালিত হতে পারে। এই ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা জরুরি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রতিটি কিশোর-কিশোরীর বাস্তববোধ এবং পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষমতা সমান নয়, তাই তাদের ব্যক্তিত্ব ও পরিস্থিতি বুঝে স্বাধীনতা দেওয়া উচিত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সন্তানকে স্বাধীনতা দেওয়ার আগে কিছু বিষয় যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, বয়স বিবেচনায় রাখুন। সন্তান যদি ১৫-১৬ বছরের হয়, তবে তাকে রাতে একা বাইরে যাওয়া বা লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর অনুমতি দেবেন না। তাকে বোঝান যে এর জন্য আরও কিছু বছর অপেক্ষা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সুস্পষ্ট নিয়ম তৈরি করুন। কখন বাড়ি থেকে বের হবে, কখন ফিরবে, বন্ধুদের সঙ্গে কতক্ষণ সময় কাটাবে—এসব বিষয়ে সন্তানের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম ঠিক করে নিন। তৃতীয়ত, যদি সে নির্ধারিত নিয়ম মানতে ব্যর্থ হয়, তাহলে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিন। এতে সে বুঝতে পারবে যে নিয়মের গুরুত্ব রয়েছে এবং ভবিষ্যতে একই ভুল করা থেকে বিরত থাকবে।

চতুর্থত, স্বাধীনতার সঙ্গে কিছু দায়িত্বও দিন। ঘরের কাজে তাকে যুক্ত করুন এবং লক্ষ্য করুন সে দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে কি না। এতে তার মধ্যে দায়িত্ববোধ তৈরি হবে। সবশেষে, সবচেয়ে জরুরি হলো সন্তানের সঙ্গে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা। এতে যোগাযোগ আরও দৃঢ় হবে এবং সে নিজের সমস্যাগুলো সহজে আপনার সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারবে। অভিভাবকরা যদি সন্তানের ওপর আস্থা রাখেন এবং তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দেন, তাহলে তারা দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।

এই পুরো প্রক্রিয়াটি বাবা-মা ও সন্তানের পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং যোগাযোগের ওপর নির্ভরশীল। সঠিক দিকনির্দেশনা এবং বিশ্বাসের মাধ্যমে এই কঠিন সময়টি সফলভাবে পার করা সম্ভব।