শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২
আশুলিয়ায় সমাবেশে তারেক রহমান

সরকার পরিচালনা করতে হলে নাগরিকদের কথা শুনতে হবে

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ৩১, ২০২৫, ০৯:৪৭ এএম

সরকার পরিচালনা করতে হলে নাগরিকদের কথা শুনতে হবে

ছবি- সংগৃহীত

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশের সর্বস্তরের জনগণ কয়েকজন মানুষের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার জন্য দেড় দশক ধরে আন্দোলন অব্যাহত রাখেনি, কিংবা জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হননি। জনগণ রাষ্ট্র এবং সরকারে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্যই স্বৈরাচারকে হটিয়েছেন, জীবন উৎসর্গ করেছেন। সুতরাং সরকারে যখন যারাই থাকুক, সরকার পরিচালনা করতে চাইলে অবশ্যই নাগরিকদের কথা শুনতে হবে।

গতকাল (বুধবার) বিকালে সাভারের আশুলিয়ার দারুল ইহসান মাদরাসা মাঠে এক সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। 'জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন' উপলক্ষে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ছাত্র-শ্রমিক-জনতার পরিবারের সম্মানে ‘নারকীয় জুলাই’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে বিএনপি।

তারেক রহমান বলেন, "একজন রাজনৈতিক কর্মী, একজন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি, একজন নাগরিকের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগের অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে নির্বাচন। প্রতিটি নাগরিক যাতে নিজের কথা নিজেই বলতে পারে, সেটা নিশ্চিত করার স্বার্থেই একটি দায়িত্বশীল দল হিসেবে বিএনপি বারবার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দেয়।"

তিনি বিশ্বাস করেন, স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে জাতীয় সরকার পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে জনগণ সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পেলে রাষ্ট্র এবং সরকারে জনগণের ইচ্ছা প্রাধান্য পাবে এবং রাষ্ট্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। তিনি আরও বলেন, "রাষ্ট্র ও রাজনীতির মূল ভিত্তি হচ্ছে জনগণ। জনগণকে দুর্বল রেখে রাষ্ট্র, রাজনীতি, সরকার কিংবা সংস্কার কোনো কিছুকেই শক্তিশালী এবং টেকসই করা সম্ভব নয়, করা যাবে না।" নাগরিকদের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ ও চর্চার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং জনগণ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রের জনগণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠলে ভবিষ্যতে কেউ ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে পারবে না বলে তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন।

তারেক রহমান মন্তব্য করেন, "জুলাই গণঅভ্যুত্থানে লাশের সঙ্গে যে বর্বরতা ও নির্মমতা চালানো হয়েছে তা কারবালার নৃশংসতাকেও হার মানিয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যা চালানো হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন শ্রমিক। বিশেষ করে সাভারের আশুলিয়ায় শ্রমিকদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছিল। হত্যা করে লাশগুলোকে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। লাশের সঙ্গে এমন বর্বরতা, এমন নির্মমতা কারবালার নৃশংসতাকেও হার মানিয়েছে।"

তিনি আরও উল্লেখ করেন, "৫ আগস্ট ফ্যাসিস্টদের পলায়নের দিন সাভার আশুলিয়ায় গণহত্যা চলছিল। গত বছর জুলাইয়ের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই আন্দোলনে কিন্তু শ্রমজীবী মানুষের সরাসরি কোনো স্বার্থ জড়িত ছিল না। কারণ তারা কোনো সরকারি চাকরির আশা করেননি। পোশাক কারখানার শ্রমিক-দিনমজুর, ভ্যানচালক, রেস্তোরাঁকর্মী, রিকশাচালক সেদিন রাস্তায় নেমে এসেছিলেন, কারণ ফ্যাসিস্ট যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে তাহলে কেউ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফেরত পাবেন না এবং কোনো ন্যায্য দাবি আদায় হবে না।"

সমাবেশে দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, "শেখ হাসিনা ভারতে বসে বিভিন্ন অডিও বক্তব্যের মাধ্যমে আবারও দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।" তিনি আরও মন্তব্য করেন যে, "ক্ষমতায় চিরদিন টিকে থাকতেই শেখ হাসিনা গুলি করে মানুষ হত্যা করেছে।" বিএনপির এই মহাসচিব বলেন, "সংস্কার নিয়ে অনেক আলাপ আলোচনা হলেও শেখ হাসিনা ও দোসরদের বিচার এখনো দৃশ্যমান হয়নি। এখনো অনেক হতাহতের পরিবার রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা পায়নি। এই কাজে মাঠ প্রশাসনকে কাজে লাগানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।"

ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, সহ-পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবু, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক

শহীদ পরিবারের মধ্যে বাবুল হোসেনের স্ত্রী লাকি আখতার, আরাফাত মুন্সির বাবা স্বপন মুন্সি, বায়েজিদ মুস্তাফিজের স্ত্রী রিনা আখতার, শ্রাবণ গাজীর বাবা আবদুল মান্নান গাজী, মামুন খন্দকার বিপ্লবের স্ত্রী খন্দকার সাথী, সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম, আরাফুর রহমান রাসেলের ভাই সায়েদুর রহমান বাবু এবং জুলাই অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে পঙ্গু শান্ত তাদের কষ্টের কথা তুলে ধরতে গিয়ে পুরো সমাবেশস্থলকে আবেগময় করে তোলেন।