সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

নববী বরকতে আজও সুরভিত তায়িফের পর্বতচূড়া

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ২, ২০২৫, ০১:৩৮ পিএম

নববী বরকতে আজও সুরভিত তায়িফের পর্বতচূড়া

ছবি- সংগৃহীত

প্রত্যেক মুসলমানের আবেগ ও ভালোবাসার একটি জায়গা হলো সৌদি আরবের তায়েফ। এই স্থানটি কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই নয়, বরং প্রিয় নবী মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শৈশব ও তার সঙ্গে জড়িত বরকতময় ইতিহাসের জন্য পবিত্র স্থান হিসেবে পরিচিত। নবীজি (সা.)-এর কোমল স্পর্শে ধন্য এই ভূমিতে তাঁর বক্ষবিদারণ হয়েছিল। তায়েফে আসার পর তাঁর দুধ মা হালিমা (রা.)-এর ঘরে আল্লাহর বিশেষ রহমতের বারিধারা বর্ষিত হয় এবং তিনি সব ক্ষেত্রে এক অন্য রকম বরকত অনুভব করতে থাকেন। এমনকি তাঁর গৃহপালিত পশুগুলোও অন্য পশুর তুলনায় বেশি দুধ দিতে শুরু করে।

মরুর বুকে গোলাপের গ্রাম: তায়েফের অতুলনীয় বৈশিষ্ট্য

বর্তমান যুগেও যেন সেই বরকতের ছাপ তায়েফে রয়ে গেছে। উর্বর মাটি ও নির্মল আবহাওয়ার জন্য এই জায়গাটি আজও বিখ্যাত। সৌদি আরবজুড়ে এখানকার ফরমালিনমুক্ত নিরাপদ ফসল সমাদৃত। আমাদের অনেকেরই অজানা যে, মরুর দেশ খ্যাত সৌদি আরবে পৃথিবীর অন্যতম উত্কৃষ্ট গোলাপ ফুল চাষ হয়। সেই উত্কৃষ্ট গোলাপগুলোও নবীজি (সা.)-এর পায়ের স্পর্শ হওয়া এই তায়েফ ভূমিতেই চাষ হয়, যা UNESCO-র Intangible Cultural Heritage of Humanity তালিকায় যুক্ত হয়েছে।

তায়েফ এলাকাটি গোলাপ, এগুলোর পাপড়ি, তেল ও মনোমুগ্ধকর সুগন্ধির জন্য বিখ্যাত। তায়েফ গোলাপ তায়েফ অঞ্চলের মনোমুগ্ধকর পরিবেশে খুব যত্নে বেড়ে ওঠে। বলা যায়, গোলাপ চাষ এখানকার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই গোলাপের চাষ, সংগ্রহ, পাতন এবং তেল নিষ্কাশনের কৌশল প্রয়োগ ও সংরক্ষণ করা হয়েছে, যেন এই মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঐতিহ্যগত ইতিহাস অনুভব করা যায়।

পবিত্র কাবা শরিফে তায়েফ গোলাপের ব্যবহার ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব

তায়েফ গোলাপ থেকে তৈরি হওয়া গোলাপজল ও গোলাপ তেল শুধু উত্কৃষ্ট প্রসাধনী বা অভিজাত রুচির প্রতীকই নয়, বরং মক্কার পবিত্র কাবা শরিফ ধোয়ার অন্যতম উপকরণও বটে, যা একে এক পবিত্র মাত্রা দেয়। বিশেষ করে রাজপরিবার ও উপসাগরীয় ধনাঢ্য পরিবারগুলোর মধ্যে এর ব্যবহার খুবই জনপ্রিয়।

সৌদি প্রেস এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্থানীয় কৃষক রাদ্দাদ আল-তালহি জানান, এই পর্বতচূড়াগুলোতেই মূলত তায়েফ গোলাপের ঝোপ ও খামারগুলো সীমাবদ্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, এখন এই চাষ অনেকটা সম্প্রসারিত হয়েছে এবং তা সৌদি বাজারে ৬৪ মিলিয়ন সৌদি রিয়ালেরও বেশি মূল্যের লাভজনক বিনিয়োগে পরিণত হয়েছে। সারাওয়াত পর্বতমালার তায়েফ গোলাপ খামার থেকে প্রতিবছর প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন গোলাপ সংগ্রহ করা হয় এবং তায়েফ অঞ্চলে ৯১০টিরও বেশি খামার রয়েছে। প্রায় ৭০টি কারখানা গোলাপ থেকে ৮০টিরও বেশি চাহিদাসম্পন্ন পণ্য তৈরি করে।

তিনি আরও জানান, ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে গোলাপের তেল পাতনের সময় তামার পাত্র ব্যবহার করা হয়, যা পাতন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং উন্নত মান নিশ্চিত করে। এই সূক্ষ্ম পদ্ধতিতে তৈরি হয় নানা ধরনের পণ্য, যেমন—সাধারণ গোলাপ জল, ঘন গোলাপ জল এবং বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান গোলাপ তেল।

(আরব নিউজ, ইউনেসকোর ওয়েবসাইট ও সৌদি প্রেস এজেন্সির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট অবলম্বনে)