আগস্ট ১৬, ২০২৫, ১০:৩২ এএম
ইসলামে এমন কিছু আমল রয়েছে, যার সুফল মানুষ দুনিয়াতেই নগদ পেয়ে থাকে। এসব আমল ইখলাসের সঙ্গে এবং পূর্ণ আস্থা নিয়ে করলে মহান আল্লাহ বান্দার প্রতি বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন। জীবনের প্রতিটি কাজে আল্লাহর গায়েবি সাহায্য অনুভব করা যায় এবং রিজিক ও বরকত অনুভূত হয়। এমন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো তাহাজ্জুদের নামাজ, যা একজন মানুষের জীবনকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দিতে পারে। এই ধর্ম-জীবন প্রতিবেদনে তাহাজ্জুদের গুরুত্ব, ফজিলত এবং এর বৈপ্লবিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হলো।
তাহাজ্জুদ হলো রাতের শেষ ভাগে, কিছুক্ষণ ঘুমানোর পর আদায় করা এক বিশেষ নফল নামাজ। অনেক ওলি এবং নেককার ব্যক্তি তাহাজ্জুদ ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারেননি। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাহাজ্জুদের গুরুত্ব সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন—‘আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে। আশা করা যায়, তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭৯)। অন্য এক আয়াতে তাহাজ্জুদকে মুমিন বান্দাদের বিশেষ গুণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, 'তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে।' (সুরা সিজদা, আয়াত : ১৬)
অর্থাৎ, একজন প্রকৃত মুমিন রাতের আরাম-আয়েশের ঘুম ত্যাগ করে নিস্তব্ধ পরিবেশে মহান আল্লাহর দরবারে হাজির হন। যখন পৃথিবীর সবাই ঘুমে বিভোর, তখন তারা আল্লাহর প্রেমে মগ্ন হয়ে সেজদায় লুটিয়ে পড়েন এবং অশ্রু বিসর্জন করে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চান। হাদিস শরিফে তাহাজ্জুদের গুরুত্ব আরও বিস্তারিতভাবে উঠে এসেছে। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, "সারা রাতের মধ্যে এমন একটি বিশেষ সময় আছে যে সময়ে কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের কোনো কল্যাণ প্রার্থনা করলে তিনি তাকে তা দান করেন। আর ওই বিশেষ সময়টি প্রত্যেক রাতেই থাকে।" (মুসলিম, হাদিস : ১৬৫৫)।
অতএব, জীবনের যেকোনো সমস্যার সমাধান, যেকোনো বিপদ থেকে মুক্তি, দুনিয়া ও আখিরাতের নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য তাহাজ্জুদ একটি অত্যন্ত কার্যকরী আমল। এটি শুধু আত্মিক শান্তিই দেয় না, বরং জীবনের বাস্তব সমস্যাগুলো সমাধানের ক্ষেত্রেও আল্লাহর অদৃশ্য সাহায্য এনে দেয়। আবদুল্লাহ বিন সালাম (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “হে লোকসকল! তোমরা পরস্পর সালাম বিনিময় করো, অভুক্তকে আহার করাও এবং রাতের বেলা মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন সালাত পড়ো। তাহলে তোমারা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” এই হাদিসটি তাহাজ্জুদের গুরুত্ব এবং পরকালে এর সুফলের প্রতি ইঙ্গিত করে।
তাহাজ্জুদের আমল মানুষের মনে এক ধরনের গভীর প্রশান্তি এনে দেয় এবং তাদের জীবনকে নতুন করে সাজাতে সাহায্য করে।