বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫, ১২ ভাদ্র ১৪৩২

অ্যাথলেটিক্স: কেন রেকর্ড গড়েও আন্তর্জাতিক মঞ্চে ব্যর্থ?

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ২৭, ২০২৫, ১০:১৪ এএম

অ্যাথলেটিক্স: কেন রেকর্ড গড়েও আন্তর্জাতিক মঞ্চে ব্যর্থ?

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে অ্যাথলেটিক্সের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রায়শই হতাশা দেখা যায়। প্রতি বছর জাতীয় পর্যায়ের টুর্নামেন্টগুলোতে একাধিক নতুন রেকর্ড গড়া হলেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে সেই সাফল্য ধরে রাখতে পারেন না দেশের ক্রীড়াবিদরা। সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সামার অ্যাথলেটিক্সেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি, যেখানে সাতটি নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েছেন অ্যাথলেটরা। এই রেকর্ডগুলো এক ধরনের স্বস্তির নিঃশ্বাস আনলেও ক্রীড়া বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে এর ফারাক অনেক। প্রশ্ন উঠছে, এই রেকর্ডগুলো কি আসলেই অর্থবহ?

সাম্প্রতিক জাতীয় সামার অ্যাথলেটিক্সে বেশ কিছু চমকপ্রদ পারফরম্যান্স দেখা গেছে। পুরুষদের ডিসকাস থ্রোয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আবদুল আলিম ১৪ বছর আগের রেকর্ড ভেঙে ৪৬.৯৪ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করে নতুন রেকর্ড গড়েন। মেয়েদের শটপুটে সেনাবাহিনীর জান্নাত বেগম ১৩.৯১ মিটারের নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েন। এছাড়াও মেয়েদের পাঁচ হাজার মিটার দৌড়ে রিংকি বিশ্বাস ১৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে, এবং তিন হাজার মিটার ইভেন্টে ১০ মিনিট ২৭.৬০ সেকেন্ড সময় নিয়ে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেন। পুরুষদের পোলভল্ট এবং মেয়েদের ট্রিপল জাম্প ও ১০ হাজার মিটার দৌড়েও নতুন রেকর্ড হয়েছে। প্রতিটি রেকর্ডের পর অ্যাথলেটদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এই আনন্দ কি দীর্ঘস্থায়ী?

রিপোর্টারের ভয়েস থেকে জানা গেছে, অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন এই অর্জনগুলোকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখলেও তাদের অভ্যন্তরীণ আলোচনায় আন্তর্জাতিক পারফরম্যান্স নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা যখন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যান, তখন তাদের পারফরম্যান্স হতাশাজনক হয়। এর মূল কারণ হলো, আমাদের ঘরোয়া রেকর্ডের মান আন্তর্জাতিক মানের চেয়ে বহু পিছিয়ে। যেমন, পুরুষদের ডিসকাস থ্রোয়ে আবদুল আলিম ৪৬.৯৪ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করে রেকর্ড গড়লেও সর্বশেষ নেপাল এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী ভারতের কিরপাল সিংয়ের দূরত্ব ছিল ৫৭.৮৮ মিটার। এখানে দুজনের মধ্যে পার্থক্য প্রায় ১১ মিটারের।

একইভাবে, মেয়েদের শটপুটে জান্নাত ১৩.৯১ মিটার দূরত্বে রেকর্ড করলেও এসএ গেমসে ভারতের আভা খাতুয়ার স্বর্ণজয়ী দূরত্ব ছিল ১৫.৩২ মিটার। এই ফারাক ১.৪১ মিটারের। দৌড়ের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যায়। পাঁচ হাজার মিটার দৌড়ে রিংকি বিশ্বাসের ১৮ মিনিট ২০ সেকেন্ডের রেকর্ডটি শ্রীলঙ্কার নিলানী রত্নায়েকের ১৬ মিনিট ০৫.১৮ সেকেন্ডের স্বর্ণজয়ী টাইমিংয়ের চেয়ে প্রায় ২ মিনিট ১৫ সেকেন্ড বেশি। এই ধরনের বিশাল ব্যবধানই প্রমাণ করে, দেশের অ্যাথলেটদের প্রশিক্ষণের পদ্ধতি, সুযোগ-সুবিধা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে।

ক্রীড়া বিশ্লেষকদের মতে, কেবল রেকর্ড গড়লেই হবে না, আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করে সেই অনুযায়ী প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। বাংলাদেশের অ্যাথলেটদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো করতে হলে উন্নতমানের কোচিং, আধুনিক সরঞ্জাম এবং নিয়মিত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের সুযোগ দরকার। শুধুমাত্র ঘরোয়া আসরে রেকর্ড গড়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করলে তা দেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না। এটি কেবলই এক ধরনের মিথ্যা আত্মতুষ্টি, যা শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মঞ্চে অর্থহীন প্রমাণিত হয়। ফেডারেশন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি, যাতে দেশের অ্যাথলেটিক্স সত্যিকার অর্থেই বিশ্বমানের হয়ে উঠতে পারে।