জুলাই ২২, ২০২৫, ০৫:০৬ পিএম
১০ বছর আগে ঘটে যাওয়া এক পারিবারিক অপমানের নির্মম প্রতিশোধ নিয়েছে এক তরুণ। ভারতের উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌতে সোনু কশ্যপ নামের এক যুবক তার মাকে মারধর ও অপমান করার দায়ে মনোজ কুমার নামের এক ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে হত্যা করেছেন। এই ঘটনা সিনেমার প্রতিশোধের গল্পকেও হার মানিয়েছে, তবে এর শেষটা হয়েছে অপ্রত্যাশিতভাবে। খুনের পর বিজয় উল্লাসে বন্ধুদের পার্টি দিয়ে সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করতেই ধরা পড়েছে সোনু ও তার সহযোগীরা।
প্রায় এক দশক আগে এক তুচ্ছ ঘটনায় মনোজ কুমার সোনুর মাকে মারধর ও অপমান করে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। সেই সময় থেকেই মায়ের অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার শপথ নেয় কিশোর সোনু। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে সে পাগলের মতো মনোজকে খুঁজে বেড়িয়েছে লক্ষ্ণৌর অলিগলিতে। সময়ের পরিক্রমায় সোনু হাল ছাড়েনি, প্রতিশোধের আগুন তার মনে দাউ দাউ করে জ্বলছিল। অবশেষে তিন মাস আগে লক্ষ্ণৌর মুনশি পুলিয়া এলাকায় মনোজকে ডাব বিক্রি করতে দেখে সে। তখনই শুরু হয় নির্মম প্রতিশোধের পরিকল্পনা।
মনোজকে খুঁজে পাওয়ার পর সোনু তার রুটিন পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। মনোজ কখন দোকানে আসে, কখন বন্ধ করে—সবকিছু সে সতর্কভাবে খেয়াল করে। এরপর সে তার চার বন্ধু—রণজিৎ, আদিল, সালামু ও রহমত আলীকে এই প্রতিশোধের যাত্রায় শামিল করে। সোনু তাদের প্রতিশ্রুতি দেয় যে, মনোজকে খুনের পর এক জমকালো পার্টি দেওয়া হবে। এই প্রলোভনেই বন্ধুরা তার সঙ্গে যোগ দেয়।
গত ২২ মে মনোজ যখন দোকান বন্ধ করে একা ফিরছিলেন, সেই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল সোনু ও তার বন্ধুরা। লোহার রড দিয়ে তাকে বেদম মারধর করে ফেলে রেখে যায় তারা। গুরুতর আহত অবস্থায় মনোজকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মনোজকে হত্যার পর সোনু তার বন্ধুদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখে। সে এক জমকালো মদ্যপানের পার্টি আয়োজন করে। আর সেই পার্টির ছবি কেউ একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে। পুলিশের কাছে এই মামলা শুরুতে বেশ জটিল ছিল। সিসিটিভি ফুটেজে খুনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অস্পষ্ট ছবি পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু তাদের কোনো হদিস ছিল না।
কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া পার্টির ছবিগুলোই পুলিশের নজর কাড়ে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা এক সন্দেহভাজনের পোশাকের সঙ্গে পার্টির ছবিতে থাকা একজনের পোশাকের অদ্ভুত মিল ধরা পড়ে। খুনের দিন কমলা রঙের যে টি-শার্ট পরে তাকে সিসিটিভিতে দেখা গিয়েছিল, পার্টির ছবিতেও তার গায়ে সেই একই পোশাক ছিল। এই সূত্র ধরেই পুলিশ তল্লাশি অভিযান চালিয়ে সোনু কশ্যপ, রণজিৎ, আদিল, সালামু ও রহমত আলী—এই পাঁচজনকেই গ্রেপ্তার করে।
এই ঘটনা একদিকে যেমন ব্যক্তিগত প্রতিশোধের এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে, তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপরিকল্পিত ব্যবহারের বিপদও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। এক দশক ধরে পুষে রাখা ক্ষোভের পরিণতিতে একটি প্রাণ ঝরে গেল, আর সেই প্রতিশোধের উল্লাসই শেষ পর্যন্ত অপরাধীদের আইনের হাতে তুলে দিল। এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে যে, আইন হাতে তুলে নেওয়া বা অপরাধ করে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
আপনার মতামত লিখুন: