রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২
ক্রিকেট

আইসিসির রাজস্ব বণ্টন: ভারতের বরাদ্দ কমানোর পরামর্শ দিলেন মাইকেল ভন

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২০, ২০২৫, ০৪:৫৪ পিএম

আইসিসির রাজস্ব বণ্টন: ভারতের বরাদ্দ কমানোর পরামর্শ দিলেন মাইকেল ভন

সংগৃহীত

আমাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)-এর রাজস্ব বণ্টনের নীতি নিয়ে ফের আলোচনা ও বিতর্কের ঝড় উঠেছে। সম্প্রতি ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। তার মতে, ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে আয়ের একটি বড় অংশ ভারত পেলেও, বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের মতো দলগুলোর আরও বেশি আর্থিক সহায়তা পাওয়া উচিত। এই পরামর্শটি আইসিসির বর্তমান রাজস্ব মডেলের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং ক্রিকেট মহলে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) প্রায় ১০ হাজার কোটি রুপি আয় করেছে, যার একটি বড় অংশ এসেছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) থেকে। তবে, আইসিসি থেকেও বিসিসিআই এক বছরে ১ হাজার ৪২ কোটি রুপি পেয়েছে, যা তাদের মোট আয়ের ১০.৭০ শতাংশ। এটি আইসিসি থেকে কোনো দলের পাওয়া সর্বোচ্চ অর্থ এবং এর চেয়ে বেশি অর্থ আর কোনো দলই পায় না। বিপরীতে, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ডের মতো দলগুলো ভারতের তুলনায় অনেক কম অর্থ পায়, যা তাদের ক্রিকেটীয় কাঠামো এবং খেলোয়াড়দের আর্থিক সুযোগ সীমিত করে দেয়।

আইসিসির এই নীতি প্রসঙ্গে মাইকেল ভন বলেন, "যে জিনিসটা আমার বাজে লাগে, সেটা হচ্ছে ক্রিকেটের টাকাপয়সা সঠিকভাবে ভাগ হয় না। আইসিসির অনেক টাকা আছে। আমরা যদি ক্রিকেটে দুই স্তরও চালু করি, সবচেয়ে ন্যায্য হচ্ছে ভাগাভাগিটা ঠিক করা। আমি বলছি না যে সবাই একদম সমানে সমান টাকা পাক।" তার এই বক্তব্য আইসিসির রাজস্ব মডেলের সমালোচনা এবং ক্রিকেটের উন্নয়নে সমবণ্টনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাইয়ে আইসিসি বোর্ড সভায় ২০২৪-২৭ চক্রের লভ্যাংশ ভাগাভাগির যে মডেল অনুমোদন করা হয়, সেখানে ভারতের জন্য সবচেয়ে বেশি ৩৮.৫০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর বিপরীতে, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) ৬.৮৯ শতাংশ, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) ৬.২৫ শতাংশ এবং পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) ৫.৭৫ শতাংশ হারে লভ্যাংশ পাচ্ছে। বাকি দেশগুলোর সবাই ৫ শতাংশেরও কম লভ্যাংশ পাচ্ছে, যা ক্রিকেটের বৈশ্বিক উন্নয়নে একটি বড় ভারসাম্যহীনতা তৈরি করছে বলে ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মনে করেন। ভারতের এই বিশাল অঙ্কের বরাদ্দ মূলত আইসিসি ইভেন্টগুলোর সম্প্রচার স্বত্ব থেকে আসা আয়ের উপর ভিত্তি করে, যেখানে ভারতীয় বাজার একটি বিশাল ভূমিকা রাখে।

বিভিন্ন পক্ষের প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ভনের মতো সাবেক ক্রিকেটার ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই বৈষম্যমূলক বণ্টন ছোট দলগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। ভন বলেছেন, "ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের মতো দলগুলোর ভাগের টাকা আরও বেশি পাওয়া উচিত, যাতে তারা খেলোয়াড়দের আরও বেশি টাকা দিতে পারে। একটা ভালো অঙ্কের অর্থ পেলে এই খেলোয়াড়েরা জাতীয় দলের হয়ে আরও বেশি দিন খেলবেন।" তার এই যুক্তি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা পেলে এসব দেশের খেলোয়াড়রা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের দিকে ঝুঁকবেন না এবং দেশের জন্য আরও বেশি সময় দিতে পারবেন, যা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মানোন্নয়নে সহায়ক হবে। বাংলাদেশের মতো দেশ, যেখানে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ব্যাপক এবং তরুণ প্রতিভা উঠে আসছে, সেখানে আরও বেশি আর্থিক সহায়তা পেলে অবকাঠামো উন্নয়ন, তৃণমূল ক্রিকেট এবং খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে।

পরিশেষে বলা যায়, আইসিসির রাজস্ব বণ্টন মডেল নিয়ে মাইকেল ভনের এই মন্তব্য ক্রিকেটের বৈশ্বিক সমতা এবং টেকসই উন্নয়নের প্রশ্নটিকে সামনে নিয়ে এসেছে। যদিও ভারতীয় বাজারের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই, তবে ক্রিকেটের সার্বিক বিকাশ নিশ্চিত করতে ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায্য রাজস্ব বণ্টনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশসহ অন্যান্য ছোট ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সমর্থন নিশ্চিত করা গেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে এবং বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা আরও বিস্তৃত হবে। আইসিসিকে এই বিষয়ে একটি সুদূরপ্রসারী ও ন্যায়সঙ্গত নীতি গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে ক্রিকেটের সকল সদস্য দেশের সমান বিকাশের সুযোগ তৈরি হয়।