আগস্ট ২৮, ২০২৫, ০৬:৫২ পিএম
ভারত সম্প্রতি অগ্নি-৫ নামের একটি শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। এর পাল্লায় তুরস্ক ও চীনের বড় অংশ অন্তর্ভুক্ত। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরীক্ষা মূলত চীনের দিকে ইঙ্গিত করে।
ভারত তার সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সম্প্রতি অগ্নি-৫ নামের একটি শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। বুধবার (২৮ আগস্ট) ওড়িশা প্রদেশের উপকূলে এই পরীক্ষা চালানো হয়। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই পরীক্ষার মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্রটির সব প্রযুক্তিগত ও কার্যকরী দিক যাচাই করা হয়েছে।
অগ্নি-৫ পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম এবং এটি ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি একটি উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এর পাল্লা প্রায় ৫,০০০ কিলোমিটার, যা ভারতের গণমাধ্যমে ‘তুরস্ক থেকে চীন পর্যন্ত’ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
যদিও সরকার এই পরীক্ষাকে একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করেছে, তবে সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এর প্রধান লক্ষ্য হলো চীন এবং পাকিস্তান। এমনকি পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে তুরস্ককেও এর আওতায় আনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে চীনের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের সীমান্ত উত্তেজনা এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রেক্ষাপটে এই পরীক্ষা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
২০২০ সালের গালওয়ান উপত্যকায় মারাত্মক সীমান্ত সংঘর্ষের পর ভারত ও চীনের সম্পর্ক আরও জটিল হয়েছে। ভারত বর্তমানে কোয়াড (QUAD) নিরাপত্তা জোটের সদস্য, যা যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানের সঙ্গে একত্রে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় কাজ করে।
অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের দৈর্ঘ্য ১৭.৫ মিটার, ওজন ৫০ হাজার কেজি এবং এটি এক হাজার কেজির বেশি পারমাণবিক বা প্রচলিত ওয়ারহেড বহন করতে পারে। এর গতি প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৩০ হাজার কিলোমিটার, যা এটিকে বিশ্বের দ্রুততম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলির মধ্যে অন্যতম করেছে। এটি ২০১২ সালের পর অগ্নি-৫ এর দশম পরীক্ষা এবং গত বছরের মার্চের পর প্রথম। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরীক্ষার সময়কাল গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি এমন এক সময়ে সম্পন্ন হয়েছে যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দিতে চীনে যাচ্ছেন।
যদিও এই সফরটি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নতির ইঙ্গিত দিতে পারে, তবে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং অন্যান্য আঞ্চলিক উত্তেজনার কারণে ভারত এখনও চীনকেই তার প্রধান নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে। বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের মাঝারি ও দীর্ঘ-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি মূলত চীনের দিকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়।
এই পরীক্ষার মাধ্যমে ভারত তার সামরিক শক্তি, আঞ্চলিক প্রভাব এবং বৈশ্বিক কূটনৈতিক অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।